নাসির উদ্দিন-বন্দর প্রতিনিধি: আগামী শনিবার শুরু হচ্ছে লাঙ্গলবন্দ নদে পবিত্র মহাতীর্থ অষ্টমী স্নান উৎসব। ব্রহ্মপূত্র নদের আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠা শিল্পকারখানা ও ডাইংয়ের কেমিক্যাল মিশ্রিত বজ্র দুষিত পানি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিযোগ। সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের পাপমোচন পুণ্য স্নানর্থে এক অন্যন্য তীর্থ ভূমি বন্দরের লাঙ্গলবন্দে আগামী শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ধর্মীয় পবিত্র মহাতীর্থ অষ্টমী স্নান উৎসব। শুল্কা তিথি অনুযায়ী শনিবার সকাল ১০ টা ১৪ মিনিট ১০ সেকেন্ডে লগ্ন শুরু হবে। দুই দিন ব্যপী এ স্নান উৎসব শেষ হবে আগামী রোববার সকাল ৭ টা ৫২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড। আগত পূর্ণার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন লাঙ্গলবন্দ ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে ব্রহ্মপূত্র নদের আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠা শিল্পকারখানা ও ডাইংয়ের কেমিক্যাল মিশ্রিত বজ্র দুষন পানি নদীতে পড়ছে। এ পর্যন্ত প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিযোগ। স্নান উৎসব উদ্বোধন করবেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, বিশেষ অথিতি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন, নারায়ণগঞ্জ-৩( সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা ও সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবুলী। ইতিমধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) পিন্টু বেপারীর নেতৃত্বে ব্রহ্মপূত্র নদের কচুরি পানা পরিস্কার, লাঙ্গলবন্দ এলাকায় ১৩টি ঘাটলায় কাপড় পাল্টানো, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবারহ, স্নান ঘাটে বিদ্যুতিক বাতি ও পর্যপ্ত সৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ব্রহ্মপূত্রের জলে পাপমুক্ত করেছিল পরশুরাম মুনিকে। হিন্দু ধর্মলবম্বী লোকজন মনে করেন, মহা ভারতের বর্ণনা মতে পরশুরান মুনি পাপমুক্তির জন্য ব্রহ্মপূত্র নদে যে স্থানের জলে স্নান করেছিলেন, তা লাঙ্গলবন্দ অবস্থিত। সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ^াস এ সময়ে বহ্মপূত্র নদে স্নান খুবই পূণ্যের। এস্নানের ফলে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাপমোচন হয়। এ বিশ^াস নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে এ স্নানে অংশ নেওয়ার জন্য উপমহাদেশের এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন লাঙ্গলবন্দে। পাপস্থলনের এ উৎসবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এসে এখানে সমাবেত হয়। পরশুরামের পাপ থেকে মুক্তি হওয়ার কথা স্মরণ করে শ’শ’ বছর ধরে লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপূত্র নদে অষ্টমী ¯œান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
শ্রী শ্রী ললিত সাধুর আশ্রমের পূজার্থনা ঝর্ণা রানী জানান, টোটাল ফ্যাশন গার্মেন্ট এন্ড ডাইং কারখানার রং মিশ্রিত কেমিক্যালের বজ্র পানি পাইপ দিয়ে নদে পড়ছে। এতে এ জলে ¯œান করা দূস্কর হয়ে পড়েছে । দূষিত জলে ¯œান করলে শরীর চুলকানিসহ নানা সমস্য সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারনে স্থানীয় হিন্দু পরিবারের লোকজন ব্রহ্মপূত্র নদে স্নান করা বন্ধ করে দেয়।
লাঙ্গলবন্দ ¯œান উদযাপন কমিটি নেতারা জানান, মালিবাগ এলাকায় অবস্থিত বাশার পেপার মিলের বজ্র এবং জামালউদ্দিন টেক্সটাইল ও ডাইং মিলের বজ্র খাল দিয়ে ব্রহ্মপূদে পড়ছে। নদের জল লাল, নীল, কালো রং ধারন করেছে। নদের জল থেকে দর্গন্ধ বের হচ্ছে। কলকারখানার বজ্রে পরিবেশ এখন চরম হুমকির মূখে পড়েছে। এ ব্যপারে জরুরী ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) পিন্টু বেপারী জানান, স্নান নির্বিগ্ন করতে জেলা প্রশাসক সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। স্নান ঘাটলাগুলোতে কাপড় পাল্টানোর পর্যপ্ত ব্যবস্থা, বিদ্যুতিক বাতি, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, পূণ্যার্থীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ১০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালসহ ৫টি মেডিকেল টিম সর্বাক্ষন থাকবে। এছাড়াও পূণ্যার্থীদের উন্নত সেবা প্রদানে ১০ টি এ্যাম্বোলেন্স সার্ভিস চালু থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিয়ার রহমান জানান, স্নান এলাকার প্রবেশ পথে ১০ টি চেকপোষ্ট থাকবে। পয়েন্টে থাকবে সিসি ক্যামেরা, সেচ্ছাসেবক পাশাপাশি ১৫শ ফোর্স থাকবে। কেউ বিশৃংখলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে কঠোর ভাবে দমন করা হবে। ###