স্বাস্থ্যহানীকর বিলাসবহুল তামাক পণ্য মানুষকে ধীরে ধীরে অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। পৃথিবীর যে সকল দেশে তামাক পণ্য সস্তা তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। সাদাপাতা, জর্দা, গুল, বিড়ি ও সিগারেট স্বল্পমূল্য, সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য হওয়ায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে তামাক সেবনের হার ক্রমবর্ধমান। তামাক নিয়ন্ত্রণে মূল্য ও কর বৃদ্ধি সর্বাধিক কার্যকর পদ্ধতি বিবেচিত বিধায় তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিতকরণ এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের উপর উচ্চ হারে করারোপ জরুরি। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটেরর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান, নাটাব-এর প্রকল্প কর্মকর্তা খলিল উল্লাহ, ব্রীজ-এর নির্বাহী পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন, অ্যাব ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম ফরহাদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রকল্প কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, এইড ফাউন্ডেশনের অ্যাডভোকেসি অফিসার মো. রাকিবুল প্রমুখ। কর্মসূচির সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা শুভ কর্মকার। মানববন্ধনে সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, আইন সংশোধন, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধি, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান, সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতিমালাসহ তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রণীত বিভিন্ন নীতি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করতে বিভিন্ন ধরনের কুটকৌশল অবলম্বন করে আসছে। প্রতিবছর তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের জন্য কাক্ষিত মাত্রায় তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে উচ্চ হারে কর বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো বছরে শত শত কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের রাজস্ব বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। অনেক তামাকজাতদ্রব্য প্রস্তুতকারক কোন প্রকার নিবন্ধন ছাড়াই পণ্য উৎপাদন করছে। ফলে সরকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর ফাঁকি প্রতিরোধে সকল তামাক কোম্পানিকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হোক।
আমিনুল ইসলাম ফরহাদ বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি বা এর কর বৃদ্ধির প্রসঙ্গ এলেই তামাক কোম্পানিগুলো নানা কৌশল অবলম্বন করে। বিগত ১০ বছরের (২০০৮-২০১৭) দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো সারাবছর কোনো কর্মসূচি পালন না করলেও প্রতিবছরই বাজেট প্রণয়নের সময়কালে অর্থাৎ (মে-জুন মাসে) তামাকজাত দ্রব্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। বাজেট চলাকালীন সময়ে এসকল কর্মসূচির মূল উদ্দেশ থাকে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির মাধ্যমে তামাকের কর এবং প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করা।
খলিল উল্লাহ বলেন, বিষাক্ত তামাক চাষের মাধ্যমে আমাদের খাদ্যশষ্য উৎপাদনযোগ্য জমির ব্যাপক ক্ষতি করছে তামাক কোম্পানিগুলো। ধ্বংস করছে জীববৈচিত্র তাই তামাক চাষের উপর অতিরিক্ত ভূমি কর ও পরিবেশ কর আরোপ করতে হবে। তামাক চাষের আগে স্থানীয়ভাবে বিশেষ অনুমোদন নেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ধোঁয়াযুক্ত ও ধোয়াঁবিহীন উভয় তামাক পণ্যের সর্বনিম্ন বিক্রয় মূল্য নির্ধারন করতে হবে। বিড়ি, সিগারেটের খুচরা বিক্রয় নিষিদ্ধ (সর্বনিম্ন ২০ শলাকা নির্ধারন) করতে হবে।
মানবন্ধনে নবনীতা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, কারিতাস, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং-সহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ ও জনসাধারণরা উপস্থিত ছিলেন।