নারায়নগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম: নারায়নগঞ্জে সরকারী দুইটি হাই স্কুল গুলোতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার পরিবেশ এবং মানসম্মত শিক্ষা নেই।ক্লাশে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার প্রতি শিক্ষকদের গুরুত্ব না থাকলেও স্কুল চলাকালীন সময়ে ব্যাচ পড়ানোর নামে চলছে শিক্ষা বানিজ্য। শহরের দুইটি সরকারী স্কুলে ৬হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনার জন্য জিম্মি হয়ে আছেন শিক্ষকদের কাছে। কোন স্কুলেই অভিভাবকদের অভিযোগ শোনার জন্য কেউ নেই। সরকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এ দুটি স্কুলের পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনিক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তারাও স্কুলগুলোর সঠিক পরিচালনায় সময় দিতে না পারায় শিক্ষকদের জবাবদিহি করার কেউ নেই।
নারায়নগঞ্জে মেয়েদের একমাত্র সরকারী স্কুল হচ্ছে নারায়নগঞ্জ সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।৫০ বছরের পুরনো এ স্কুলটি মাসডাইর এলাকায় অবস্থিত ।বর্তমানে এ স্কুলে ৩২০০ মেয়ে দুই শিফটে পড়াশুনা করছে। ১২০জন শিক্ষকের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষকই ঢাকায় অবস্থান করেন। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থীদের স্কুলের ক্লাশের শিক্ষা নয় শিক্ষকদের কাছে ব্যাচ পড়েই পড়াশুনা করতে হচ্ছে এমন অভিযোগ সকল শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের।ষ্ষ্ঠ শ্রেণীর অভিভাবক আমিনা বেগম জানান,ভর্তি পরীক্ষায় মেধার ভিত্তিতে তার মেয়েকে এ স্কুলে ভর্তি করার পর এখন স্কুলে পড়াশুনার বাস্তব অবস্থা দেখে তার সন্তানের ভবিষৎ নিয়ে তিনি সংকিত। তিনি জানান, বছরের শুরুতেই শিক্ষকরা ক্লাশে ক্লাশে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তাদের ব্যাচে পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। যারা তার ব্যাচে না পড়বেন তাদের পরীক্ষায় ফেল করানো হুমকি দিয়ে থাকে। তিনি অভিযোগ করেন স্কুলের ক্লাশ চলাকালীন সময়ে শিক্ষকরা শ্রেণী কক্ষে এবং টিচার কোয়ার্টারে ব্যাচ পড়ানো কাজে ব্যস্ত থাকেন।শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাশে পড়াচ্ছেনা।মেয়েদের স্কুলে অপরিচ্ছন্ন বাথ রুম। নেই খাবার পানির ব্যবস্থা। কম্পিউটার টিচার থাকলেও ক্লাশ হয়না। লাইব্রেরীতে বই উইপোকায় খাচ্ছে।প্রধান শিক্ষককে তিন মাস আগে বদলী করা হলেও তিনি এখনও দায়িত্বে আছেন। অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ভর্তি বানিজ্যের। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মোস্তফা জানান,নিয়মিত যাতে শিক্ষকরা ক্লাশ করেন সে ব্যাপারে তিনি চেষ্টা করছেন। কিছু অভিযোগের কথা তিনি স্বীকার করে বলেন জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে বাথরুম এবং পানির সমস্যা সমাধান করবেন।
হাজিগঞ্জে অবস্থিত আইইটি সরকারী বালক বিদ্যালয়।১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলে প্রায় তিনহাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে।কয়েকটি ভবন থাকলেও এ স্কুলের শিক্ষার মান নিয়ে অসন্তোষ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে। অষ্টম শ্রেনীর একজন শিক্ষার্থী জানান, ক্লাশ নিয়মিত হয় না। শিক্ষার্থীরা ক্লাশে আসলেও শিক্ষকরা ক্লাশে নিয়মিত না এসে কোচিং এবং ব্যাচ পড়ানোর কাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করেন।নবম শ্রেনীর অভিভাবক শুশান্ত রায় অভিযোগ করেন পড়াশুনার মান কমে যাওয়ার কারনে প্রতিবছর রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। তিনি বলেন রেজলা প্রশাসন স্কুরটি পরিচালনার জন্য কোন প্রকার দায়িত্ব পালন করছেন না যে কারনে শিক্ষকরা তাদের ইচ্ছে মতো স্কুল পরিচালনা করছে।স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমেশ চন্দ্র কুন্ড জানান, আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার মান বাড়াতে। তিনি জানান, পাবলিক পরীক্ষায় গত চার বছর যাবত শতভাগ পাশ করতে পারেনি। তিনি স্বীকার করেন সুষ্ঠ পরিচালনার অভাবে শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হচ্ছে।
দুইটি স্কুলেই সরকারী নিয়ম উপেক্ষা করে ২০বছরের অধিক সময় একেকজন শিক্ষক কর্মরত থেকে শিক্ষা বানিজ্যের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া জানান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এ দুইটি স্কুলে আমার পক্ষে মনিটরিং করেন। তিনি বলেন সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন প্রকার অনিয়ম মেনে নেয়া হবেনা। অভিযোগ গুলো তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। ####