নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
টাংগাইলে গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরনে নিহত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা (১৯), তার খালাতো ভাই ফারুক (৪৫) এবং মামা সিরাজুলের (৫৫) লাশ এখনো বাড়িতে এসে পৌছায়নি। পরিবারের স্বজনরা জানিয়েছেন টাংগাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদেেন্তর পর লাশ ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সোনারাগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের পরিবারের স্বজনদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের মাতম। কান্নায় ভেংগে পড়েছেন স্বজনরা। তারা জানান, বন্যাকে গত ডিসেম্বর মাসে তার পছন্দের একটি ছেলের সাথে পারিবারিকভাবে টেলিফোনে বিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার স্বামী সৌদি প্রবাসী হলেও দুজনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক এবং নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। কারো সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এছাড়া কারো সাথে তার সম্পর্ক হয়েছে বলে কখনো মনে হয়নি।
বন্যার স্বজনদের অভিযোগ, বন্যাকে এক মাস আগে অপহরণ করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে মামলা না করতে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে আসছিল অপহরণকারীরা। তারা অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
নিহত বন্যার মা শাহিদা বেগম জানান, ঈদের দিন বিকেলে তিনি বড় মেয়ে ও বন্যাকে নিয়ে বাড়ির উঠোনে গল্প করছিলেন। আছরের আযান দিলে তিনি নামাজ পড়তে ঘরে যান। নামাজ শেষ করে এসে বড় মেয়ের কাছে শোনেন বন্যাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। সারা রাত বিভিন্ন যায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও বন্যার কোন সন্ধান মেলেনি। পরদিন সকালে একটি অজ্ঞাত মোবাইন নম্বর থেকে এক যুবক ফেন করে তাকে জানায়, বন্যা তারে কাছে নিরাপদে আছে। তার ব্যাপারে কোন চিন্তা করতে হবে না। তবে থানা পুলিশের ঝামেলায় গেলে বন্যাকে মেরে ফেলার হুমসকি দেয় ওই অজ্ঞাত পরিচয়ের যুবক। পরে তিনি সোনারগাঁ থানায় গিয়ে মোবাইল ফোনে হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
বন্যাকে অপরহরণ করাে হয়েছে বলে তার পরিবার দাবী করলেও সোনারগাঁ থানা পুলিশ বলছে, বিষয়টি প্রেমঘটিত। বন্যাকে অপহরণ করা হয় নি। সে স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিল। পুলিশ টাংগাইল থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসছিল।
সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান, বন্যাকে উদ্ধার করতে দুইদিন আগে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা বন্যার অবস্থান রাজশাহীতে বলে নিশ্চিত হয়েই সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। আমাদের পুলিশের কাছে বন্যা তার প্রেমের বিষয়টি স্বীকার করেছিল। বন্যার মায়ের জিডিতেও প্রেমের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমরা ওই যুবককে শনাক্ত করতে পারি নি।
তিনি জানান, রবিবার সোনারগাঁ থানা পুলিশের একটি দল বন্যার এক খালােতো ভাই ও এক চাচাকে সাথে নিয়ে রবিবার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেখানে পৌঁছে তারা বন্যাকে উদ্ধার করে রাতেই একটি হাইয়েস গাড়িতে করে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। মঙ্গলবার ভোরে টাঙ্গাইল এলাকায় একটি সিএনজি স্টেশনে গাড়িতে গ্যাস নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর কুমুদিনী কলেজ মোড়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে গাড়িতেই নিহত হয় বন্যা, তার খালাতো ভাই ফারুক এবং মামা সিরাজুল নিহত হন। গুরুতর আহত হন সোনারগাঁ থানাা এস আই তানভীর হাসান, এ এস আই হাবীব, কনস্টেবল আজহার এবং গাড়ির চালক মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকার আকতার (৩৫)। আহত হন। আহতদের স্থানীয় হামপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা আশংকামুক্ত রয়েছেন।
গত ১৬ জুন ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ভবনাথপুর গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছোট কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই তার মা শাহিদা বেগম সোনারগাঁ থানায় বাদি হয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন।#