স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে সরকার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকলেও এ বিষয়ে দৃশ্যত: কোনো অগ্রগতি নেই। তাই বেসরকারি চিকিৎসাখাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আলাদা শক্তিশালী কমিশন গঠনের দাবি করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ‘বেসরকারি চিকিৎসাসেবা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে টিআইবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি উত্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাসলিমা আক্তার ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন।
ঢাকার ২৬টি ও ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৯০টি নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের ওপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ গবেষণা পরিচালিত হয়। আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, সেবা কার্যক্রম, নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় মোট ৭০৬ জন তথ্যদাতার তথ্য নেয়া হয়।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বেসরকারি চিকিৎসাসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্য সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে মানুষ বেশি সেবা গ্রহণ করে থাকে বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত থেকে। কিন্তু এটা দৃশ্যমান যে, বেসরকারি চিকিৎসাখাতে নিয়ন্ত্রণকারীর নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার নিয়ন্ত্রণও করছে না, কাউকে দায়িত্বও দিচ্ছে না। যে কারণে স্বাস্থ্য সেবায় বেসরকারি এ খাতের মালিকরা দিনকে দিন আরও স্বেচ্ছারচারি হচ্ছেন, সেবার চেয়ে মুনাফা অর্জনেই যেন প্রধান লক্ষ্য।
সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে বেসরকারি চিকিৎসা খাতে যথাযথ মনোযোগ দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেসরকারি চিকিৎসাখাতের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা সরকারের জন্য বোঝা। অনেক দায়িত্বের মধ্যে এটা সরকারের জন্য কঠিন। এ খাতের সুশাসন রক্ষার জন্য দরকার পৃথক কমিশন। এর নাম হতে পারে ‘বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কমিশন’। আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে সরকার বিশেষায়িত কমিশন গঠন করলে এ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাস্থ্য সেবা একটি বড় খাত। অথচ এ খাতের সুশাসন রক্ষায়, জবাবদিহিতায় কোনো আইন নেই। একটি আইন তৈরির চেষ্টা চলছে এক দশক ধরে। এ আইন তৈরিতে যারা জড়িত তাদেরও আগ্রহ নেই। আর আইন নেই বলেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এক দশকের বেশি সময় পরও প্রণয়ন হয়নি আইন। আর আইন না থাকায় গড়ে উঠেনি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো। পরিদর্শন ও তদারকিতে রয়েছে ঘাটতি।