রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক সিনিয়র সহকারী সচিবের জীবন সংকটাপন্ন হওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের চার দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কাজ এখনো শুরুই হয়নি। গত (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-২ শাখা) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তদন্ত কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হলেও ‘ব্যস্ততা’র কারণে কমিটির সদস্যরা এক সঙ্গে বসতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য রোববার রাতে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে বলেন, যে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়ে এ কমিটি গঠিত হয়েছে তাদের প্রত্যেকে নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আগামী ২-১ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবেন। তারা অভিযুক্ত চিকিৎসক ও স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানান ওই সদস্য। ভুল চিকিৎসার শিকার ৩০তম বিসিএস ক্যাডারের প্রশাসনের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে কর্মরত। তার পিত্তনালিতে পাথর ছিল। এটি অপসারণের জন্য গত ১৭ জানুয়ারি স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আরফিনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হন।
ভর্তির পর ডা. আরফিন জানান, পাথর অপসারণে নজরুলের শরীরে ‘ইআরসিপি’ করতে হবে। যদিও তিনি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক, তারপরও সব দায়িত্ব তিনি নেন। তার সিদ্ধান্তে ১৮ জানুয়ারি নজরুলের পিত্তনালির পাথর ইআরসিপি’র মাধ্যমে বের করা হয়। পরে তাকে কেবিনে নেয়া হয়। নজরুল ইসলামের স্ত্রী মৌরি জানান, কেবিনে নেয়ার পর থেকে নজরুলের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। তিনি বিষয়টি ডা. আরফিন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। একপর্যায়ে রোগীর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে এবং রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এমনকি তার প্রেসার খারাপের দিকে মোড় নেয়। ২১ জানুয়ারি রোগীর কী হয়েছে জানতে পীড়াপীড়ি করলে ডা. আরফিন বলেন, এ ধরনের চিকিৎসা কনজারভেটিভ ওয়েতে হয়। তাই কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাহলে রোগীর শরীর এত খারাপ কেন হচ্ছে, জানতে চাইলে আরফিন বলেন, ইআরসিপি করার সময় নজরুলের শরীরের অন্য কোনো জায়গা হয়তো কেটে যেতে পারে। যে কোনো অপারেশনে এটা হয়ে থাকে। তিনি জানান, অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকলে ২২ জানুয়ারি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. সানোয়ার হোসেন রোগীকে দেখতে আসেন। কিন্তু তিনি কিছু শুনলেও কোনো মন্তব্য করেননি। একপর্যায়ে নজরুল ইসলামের স্বজনদের চাপের মুখে পার্শ্ববর্তী বিআরবি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলীকে অন কলে আনা হয়। তিনি রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেই বুঝতে পারেন যে, ইআরসিপি করার সময় নজরুলের ডিওরেনাম (পাকস্থলীর ঠিক নিচে ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশ) কেটে গেছে।
এমন অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ডা. আরফিন নজরুলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। পরে ২৩ জানুয়ারি তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয়। চিকিৎসকদের অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে রোগীর অবস্থা আরও সংকটাপন্ন । বুধবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। এ অভিযোগের তদন্তে ১ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) যুগ্মসচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজিমকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্য হলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এএইচএম রওশন ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১/২) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
গত (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-২ শাখা) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গঠিত কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণের অনুরোধ করা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।