নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম: নারায়ণগঞ্জে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যার নিরলস প্ররিশ্রমে শিক্ষার্থীরা পেয়েছে শিক্ষার প্রকৃত আলো। তার নাম কাসেম জামাল। তাকে শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে গ্রহন করেছে শিক্ষক ও অভিভাবকরা। কাসেম জামলকে নিয়ে দৈনিক আমাদের সময়ে প্রকাশিত নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি আবদুস সালামের রিপোর্টটি পাঠকদের জন্য হুবহুব তুলে ধরা হলো। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও সুবিধাবাদী চরিত্র ধারণ না করে নারায়ণগঞ্জ শহরে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে চলেছেন আলোকিত মানুষ কাসেম জামাল। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের লড়াই করছেন তিনি। তার প্রায় একক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছে অন্তত ১০ হাজার শিক্ষার্থী। ৬৪ বছর বয়সেই তিনি নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি কাসেম জামাল, পাশাপাশি চালাচ্ছেন পাঠাগার আন্দোলন। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তার অবাধ বিচরণ। নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য নাগরিক আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
১৯৫৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের আমলাপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম কাসেম জামালের। বাবা আবদুস সোবহান মিয়া সে সময় শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। যৌথ পরিবারের মধ্যে বেড়ে ওঠা কাসেম জামাল ১৯৬৮ সালে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর পারিবারিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
কাসেম জামাল স্বাধীনতার পর থেকেই সম্পৃক্ত হন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। ১৯৭২ সালে বন্ধুদের সঙ্গে গড়ে তোলেন শাপলা নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন। এরপর জড়িয়ে পড়েন শিক্ষা আন্দোলনে। ১৯৯০ সালে নিজ এলাকা আমলাপাড়ায় আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। সারা দেশের মধ্যে এটি এখন একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিনি নিজের ছেলেকে নামিদামি কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি না করিয়ে এই বিদ্যালয়েই ভর্তি করিয়ে দেন। ছোট্ট একটি টিনের ঘর থেকে সরকারি অনুদান ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে বিদ্যালয়টি আজ বহুতল ভবনে রূপান্তরিত। প্রতিটি কক্ষে রয়েছে কম্পিউটার। সরকারি শিক্ষকদের পাশাপাশি এখানে শিক্ষকতা করছেন আরও ৩০ শিক্ষক।
বিদ্যালয়টিতে দুই শিফটে প্রায় ১ হাজার ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করছে। এরই মধ্যে জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিদ্যালয়টি শিক্ষা, স্কাউটিং, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
আমলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাসেম জামাল আমলাপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানÑ আইডিয়াল হাইস্কুল। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলটি এখন জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। নারায়ণগঞ্জে এ স্কুলটিতেই প্রথম সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি এখানেও রয়েছে সমৃদ্ধ পাঠাগার, কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞান ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ভাষা ক্লাব, জেলার শ্রেষ্ঠ স্কাউট দলসহ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সব সুযোগ-সুবিধা।
শত বছরের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল। একসময় অবহেলা আর অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় স্কুলটির শিক্ষার মান কমে যাচ্ছিল। ২০০৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসন কাসেম জামালকে এ স্কুলটির দায়িত্ব প্রদান করেন। তার দক্ষ ব্যবস্থাপনায় গত ১০ বছরে এ স্কুলটিও নগরবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ১০ বছর আগে মাত্র ৪০০ শিক্ষার্থী এ স্কুলে পড়ালেখা করত। এখন শিক্ষার্থী প্রায় ৩ হাজার। এখানেও কাসেম জামাল সহশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১২ সালে এ স্কুলটিকে কলেজে রূপান্তরিত করেন তিনি। ২০০৭ সালে তিনি অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে অবহেলিত জনপদ ভুইয়ার বাগে গড়ে তোলেন বিদ্যানিকেতন হাইস্কুল। এটিও গত দুই বছর জেলার শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল হাইস্কুলের স্বীকৃতি পেয়েছে।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীতের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে কাসেম জামালের বড় ভাই মরহুম হোসেন জামাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুধীজন পাঠাগার। সেটির পরিচালক এখন কামেস জামাল। দেশের বেসরকারি পাঠাগারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। প্রায় ৩০ হাজার বই নিয়ে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের চারতলা ভবনে এটি বিস্মৃতি লাভ করেছে। এ ছাড়া আইডিয়াল স্কুলের মাধ্যমে ৫ হাজার বই নিয়ে একটি মোবাইল পাঠাগার চালু করেছেন কাসেম জামাল। জেলার ১২ স্কুলের শিক্ষার্থীরা এ পাঠাগারের মাধ্যমে বই পড়ে থাকে।
কাসেম জামাল একজন সফল ব্যবসায়ী। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জামাল জুট বেলিং, জামাল সোপ ফ্যাক্টরি, জামাল ট্যোবাকো পরিচালনার পরও তিনি নিজ উদ্যোগে আরও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
কাসেম জামাল জানান, আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠা থাকলে যে কোনো ভালো কাজ করা যায়। সময় কোনো প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। ঢাকা কলেজে তার শিক্ষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং সহপাঠী লেখক ড. জাফর ইকবাল তার অনুপ্রেরণা। ####