একজন নবির কন্যা ও একজন নবি ও রাসুলের স্ত্রী হলেন বিবি সাফুরা। বাবার সংসারে পুরুষ না থাকায় ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই নিজেদের কাজের আঞ্জাম দিতেন।
একজন নবির কন্যা এবং আরেকজন নবির স্ত্রী হওয়ার দীর্ঘ ঘটনা ওঠে এসেছে কুরআনে। বিবি সাফুরার বাবার সাংসারিক জীবন এবং বিয়ের ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো- বিবি সাফুরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের স্ত্রী। হজরত শুআইব আলাইহিস সালামের বড় মেয়ে। তাদের বসবাস ছিল ছিল সৌদি আরবের মাদায়িনে। আর হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জন্ম বেড়ে ওঠা এবং বসবাস ছিল মিসরে। আর তৎকালীন সময়ে মিসরে ফেরাউনের রাজত্ব চলছিল।
ঘটনাক্রমে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের সম্প্রদায়ের এক লোককে শাসনসুলভ থাপ্পড় মেরে বসে; সে থাপ্পড়ে লোকটি মারা যায়। আর এ খবর ফেরাউনের কাছে পৌছলে সে মুসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে মুসা আলাইহিস সালাম মিসর থেকে আত্মগোপন করে সৌদি আরবের মাদায়িনে চলে আসে। হজরত মুসা আলাইহিস সালামের গোত্রের এক ব্যক্তির ওপর ফেরাউনের সম্প্রদায়ের এক লোক অন্যায় আক্রমন করে। মুসা আলাইহিস সালামের স্বগোত্রীয় লোক তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি ফেরাউনের সম্প্রদায়ের ওই লোককে শাসন-মূলক থাপ্পড় মারে; যার ফলে লোকটি মারা যায়।
বিবি সাফুরার বকরি চরানো ও পানি পান
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন মাদায়িনের উপকণ্ঠে এসে পৌছেন। সেখানে দেখেন অনেক রাখাল কূপ থেকে পানি তুলে তাদের বকরির পালকে পানি খাওয়াচ্ছে। আর কূপ থেকে একটু দূরে কতগলো বকরি-ছাগলের পাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দু’টি মেয়ে। তিনি মেয়ে দু’টির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা মেয়ে মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কেন বকরি চরাতে এসেছ আর দূরেই বা দাঁড়িয়ে আছ কেন?
তারা জানাল, ‘আমাদের বাড়িতে কাজ করার মতো কোনো পুরুষ মানুষ নেই। তাই বকির চরাতে আমাদেরকেই আসতে হয়। আর পুরুষ রাখালরা বকরিকে পানি পান করিয়ে চলে গেলে আমরা আমাদের ছাগল-বকরিগুলোকে পানি পান করিয়ে বাড়ি যাব।
তাদের কথা শুনে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের হৃদয়ে সহানুভূতি জাগল। তিনি ভিড় ঠেলে কূপের কাছে গিয়ে পানি ওঠিয়ে তাদের ছাগল-বকরিগুলোকে পানি পান করালেন। অতঃপর মেয়ে দুটি বাড়িয়ে তাদের শ্রদ্ধেয় পিতা, বিশিষ্ট নবি হজরত শুআইব আলাইহিস সালামের কাছে পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করলেন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে তলব
হজরত শুআইব আলাইহিস সালাম মেয়েদের কাছে ঘটনা শুনে তাদের উভয়কে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের কাছে পাঠালেন। তারা মুসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে সলজ্জকণ্ঠে জানালেন, আমাদের পিতা হজরত শুআইব আলাইহিস সালাম আপনাকে আমাদের বাড়ি যেতে বলেছেন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম সঙ্গে সঙ্গে রওয়ানা হলেন এবং হজরত শুআইব আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর ঘটনা তাঁকে শুনালেন। হজরত শুআইন আলাইহিস সালাম তাকে সান্ত্বনা দিলেন।
বিবি শাফুরার বিয়ের প্রস্তাব ও শর্ত
অতঃপর হজতর শুআইব আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আমার ইচ্ছা আমার একটি মেয়ে তোমার কাছে বিবাহ দেব। তবে শর্ত হলো ৮ বছর মতান্তরে ১০ বছর আমার ছাগল-বকরি চড়াতে হবে। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এ শর্তে রাজি হয়ে গেলেন।
বিবি সাফুরা ও মুসা আলাইহিস সালামের বিবাহ
৮ বছর মতান্তরে ১০ বছর অতিক্রম হওয়ার পর বড় মেয়ের সঙ্গে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের বিয়ে হয়ে গেল। এ বড় মেয়ের নামই হলো হজরত সাফুরা। যিনি মুসা আলাইহিস সালামের আগমনের আগে পিতার সংসারে ছোট বোনকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে নিজেরাই নিজেদের বকরিগুলো লালন-পালনের মতো কষ্টকর কাজগুলো করেছিলেন।
বিবাহের পরও হজরত মুসা আলাইহিস সালাম কিছু দিন সেখানে ছিলেন। কিছুদিন পর মুসা আলাইহিস সালাম স্ত্রী বিবি সাফুরাকে নিয়ে আবার মিসর রওয়ানা হলেন। মিসরে রহওয়ার হওয়ার পথেই আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবুয়ত ও রেসালাত দান করেন।
বিবি সাফুরার জীবনাচার থেকে আমাদের শিক্ষা হলো-
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের স্ত্রী হজরত সাফুর ছিলেন একজন নবির কন্যা। নবির মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তিনি কষ্ট করে ঘরের কাজ করতেন। বাবার সংসারে পুরুষ না থাকায় অপারগ হয়ে ছোট বোনকে নিয়ে বকরি পর্যন্ত চরাতেন।
আর এ সব কাজ করতে তিনি যেমন লজ্জাবোধ করতেন আবার পুরুষ রাখালদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বকরির পালকে পানিও পান করাতেন না। তিনি ধৈর্য ধারণ করে সবার শেষে তাদের বকরিগুলোকে পানি পান করাতেন। সাংসারিক কাজ সম্পাদনে তাদের কোনো অহংকার ছিল না। আর যখনই হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জিজ্ঞাসা করার কারণে তাদের অপারগের কথা বলেছেন, তখনও তারা অত্যন্ত লজ্জা এবং বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন।
সুতরাং নিজেদের ঘরের প্রয়োজনীয় কাজ করতে লজ্জা করা বা অলসতা করা ঠিক নয়। নিজেদের কাজ নিজেরাই করা ভাল। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহ প্রতিটি নারীকে নিজেদের সংসারের কাজ ও ছেলে-মেয়ে প্রতিপালনে যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।